বৈদিক যুগ থেকে আজ অবধি ভারতের ধর্মীয় ঐতিহ্যের প্রধান অনুঘটক হল বেদ। আধুনিক সময় এই প্রাচীন বেদের চিন্তাধারাকে অনুপ্রাণিত ও ব্যাখ্যা করেছেন স্বামী বিবেকানন্দ। তিনি বলেছেন “জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর”। এক কথায় নিঃস্বার্থ মানব প্রেমই আছে চরম সুখ।
সেই মূল কথাটি মাথায় রেখে ননীগোপাল বন্দ্যোপাধ্যায় মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন আনুষ্ঠানিকভাবে ২৫ মে ২০২২ সালে, নদীয়া জেলার হুমানিয়া পোতা গ্রামে, পূর্বপুরুষের সম্পত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, কোভিড-১৯ মহামারীর দ্বিতীয় তরঙ্গের পরে, যদিও অভাবী ছাত্রদের জন্য বিনামূল্যে শিক্ষার কার্যক্রম শুরু হয়েছিল ২০১৮ থেকেই।
বিভিন্ন তথ্য ঘেঁটে পাওয়া এই গ্রামের আদি কথা খুবই প্রশংসনীয় ও গর্বের। হুমানিয়া পোতার বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের বর্তমান প্রজন্ম তাদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে গ্রামবাসীদের সামাজিক উন্নতির সুতো তুলে নিয়েছে। ১৭৪৫ খ্রিস্টাব্দে, কৃষ্ণনগর (নদিয়া) এর তৎকালীন রাজা, মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের নির্দেশে; হুমানিয়া পোতা গ্রাম স্থাপিত হয়। মহারাজা কৃষ্ণ চন্দ্র রায় তাঁর রাজ্যে তাঁর সেবার কৃতজ্ঞতা হিসাবে শ্রী রতিকান্ত বন্দোপাধ্যায়কে (এই গ্রামের বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের প্রথম প্রজন্ম) আর্থিক সহায়তা করেছিলেন (১২০০ বিঘা জমি এবং গবাদি পশু)। শ্রী রতিকান্ত বন্দোপাধ্যায় তখন দেশান্তরিত হয়ে, নতুন প্রতিষ্ঠিত গ্রামে বসতি স্থাপন করেন, যেটি হোমপোঁতা নামে নামকরণ করা হয়েছিল, যেহেতু গ্রামে প্রায়ই হোম যোগ অনুষ্ঠিত হত। সেই থেকে বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের পূর্বপুরুষদের আট প্রজন্ম এই গ্রামে বসবাস করে আসছেন এবং তারা প্রথম থেকেই গ্রামের সার্বিক উন্নয়নে নেতৃত্ব দিয়েছেন। মানুষ বর্জিত এই গ্রামটি ছিল শুধু পরিত্যক্ত জমি, জলাশয় এবং বন। তবে সময়ের সাথে সাথে গ্রামের নাম হুমানিয়া পোতা নামে আরও আধুনিক ও উন্নত হয়েছে ।
বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের ৬ম প্রজন্মের পুরুষ শ্রী হারান চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে গ্রামে প্রথম শিক্ষা কেন্দ্র (প্রাথমিক বিদ্যালয়) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তার নিজের বাড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় ভবন-এ, যা “ঠাকুর বাড়ি” নামেও পরিচিত। ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে, এই প্রাথমিক বিদ্যালয়টি বন্দ্যোপাধ্যায় ভবন-এর, বাইরের বাড়ির একটি নবনির্মিত ভবনে স্থানান্তরিত হয়। তার ছেলে শ্রী ননীগোপাল বন্দ্যোপাধ্যায়, ৭ম প্রজন্ম, এই গ্রামের একমাত্র শিক্ষিত ব্যক্তি ছিলেন। তিনি ঐ নবগঠিত বিদ্যালয়ে যোগদান করেন এবং ১৯০৩-৪৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রধান শিক্ষক হিসাবে রয়ে যান ঐ ইস্কুলে। তাঁর স্ত্রীয়ের নাম ছিল শ্রীমতী নলিনীবালা দেবী। তাঁদের একমাত্র কন্যা শ্রীমতী করুণাময়ী দেবী এবং চার পুত্র ললিত মোহন, কিশোরী মোহন, কৃষ্ণ মোহন এবং হরি মোহন। তাদের প্রত্যেকের মধ্যেই ছিল বিভিন্ন গুণের সমাবেশ। পিতার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তাঁর বড়ো ছেলে শ্রী ললিতমোহন, ১৯৮০ সাল পর্যন্ত ঐ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রূপে ছিলেন। এই বিদ্যালয়টি ১৯৫৪ সালে একটি নতুন ভবনে (পশ্চিমপাড়ায়) স্থানান্তরিত হয় এবং গ্রামের প্রথম সরকারি অধিভুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরিণত হয়। বর্তমান বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের মহান পিতামহ শ্রী হারান চন্দ্র থেকে শুরু করে, শ্রী ননীগোপাল বন্দ্যোপাধ্যায়, তাঁর চার পুত্র, তাদের জীবদ্দশায়, মাঝেরগ্রাম পঞ্চায়েতের এখতিয়ার এবং বিশেষ করে হুমানিয়া পোতা গ্রামের মানুষের উন্নয়ন ও উন্নতির জন্য, সম্প্রতি অবধি, প্রচুর অবদান রেখেছেন।
বর্তমান ও পরবর্তী প্রজন্ম পারিবারিক উত্তরাধিকারকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অত্যন্ত উৎসাহী। যদিও সরকারি সুযোগ-ব্যবস্থায় গ্রামবাসীরা অনেক উপকৃত হয়েছে, তবুও এই নবগঠিত এনবিএম সংস্থাটি ‘দিল মাঙ্গে মোর’ মন্ত্রে বিশ্বাসী। এই সংস্থাটি বর্তমান প্রজন্মের হাতে তাদের না-পাওয়া বিষয়গুলো যথাসম্ভব তুলে দিতে চায়। সেই বিষয়গুলি যেমন-চিকিৎসা সহায়তা, প্রযুক্তিবিদ্যার উন্নয়ন, আধুনিক শিক্ষাপদ্ধতি /শিক্ষাবিস্তার ইত্যাদি, যা অবধারিতভাবে সাংস্কৃতিক নীতি ও সচেতনতা প্রচারের সাথে জড়িত।
কোন ভেদাভেদ ছাড়া, নীরবে গ্রামের ও গ্রামবাসীর উন্নতি ও প্রগতি করাই একমাত্র উপলক্ষ্য এন জি বি এম সংস্থাটির। সংগঠনের কর্মধারায় সবার সহযোগ কাম্য।
নমস্তুতে।।